এই মহিষীর অভিশাপে মৃত্যু হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের শেষ হয়েছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ | রক্তাক্ত প্রান্তরে এসে সন্তানদের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন গান্ধারী | এই ধ্বংসলীলার জন্য তিনি দায়ী করলেন শ্রীকৃষ্ণকে | তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন কৃষ্ণ | যে তিনি অনেকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা | কিন্তু শুনতে চাননি দুর্যোধন | কিন্তু কোনও কথাই মানতে চাইলেন না পুত্র শোকে কাতর গান্ধারী | অভিশাপ দিলেন, কুরু বংশের মতোই নির্বিচারে ধ্বংস হয়ে যাবে শ্রীকৃষ্ণের যদু বংশ | গান্ধারীর অভিশাপকে আশীর্বাদ হিসেবে নিলেন কৃষ্ণ | কারণ তিনি জানতেন যাদবদের বংশ একদিন অন্তর্কলহের জন্য শেষ হয়ে যাবে | তাই গান্ধারী তাঁর কাজ সহজ করে দিয়েছিলেন | গান্ধার কন্যা সেইসঙ্গে কৃষ্ণকেও অভিশাপ দিয়েছিলেন | যে তিনি আর মাত্র ৩৬ বছর বাঁচবেন | এবং হয়েওছিল তাই | কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে অভিশাপ দেওয়ার ৩৬ বছর পরে মারা গিয়েছিলেন কৃষ্ণ | কারণ গান্ধারীর স্থির বিশ্বাস ছিল কৃষ্ণ চাইলেই এই যুদ্ধ আটকাতে পারতেন | অন্যদিকে, দ্বারকায় ক্রমশ ভেঙে পড়ে যদু বংশ | কৃষ্ণের শাসনে যে উচ্চতায় গিয়েছিল তারা, তার চেয়েও বেশি পতন হয় | নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় যদু বংশ | ঋষিদের সঙ্গে পরিহাস করায় এক দলা লোহার জন্ম দেয় কৃষ্ণ-পুত্র শাম্ব | রাজা উগ্রসেনের পরামর্শে সেই পিণ্ড গুঁড়ো করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয় শাম্বর বন্ধুরা | পুরো ঘটনা লুকিয়ে রাখা হয় কৃষ্ণের কাছ থেকে | বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যাওয়া যদু বংশের অন্তর্কলহে প্রাণ হারান অনেকে | তাঁদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণ-পুত্র প্রদ্যুম্নও | দ্বারকা এবং যাদবদের এই হাল দেখে বনবাসে চলে যান বলরাম ও কৃষ্ণ | সেখানেই একদিন কৃষ্ণ দেখেন বলরামের দেহ থেকে সাপ বেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে | তিনি বুঝতে পারেন বলরাম প্রয়াণের পরে যাত্রা করেছেন বৈকুণ্ঠের পথে | এদিকে কৃষ্ণ-পুত্র শাম্বর জন্ম দেওয়া সেই লোহার পিণ্ডের কী হল? বহু চেষ্টা করেও সেটা পুরোটা গুঁড়ো করা যায়নি | থেকে গিয়েছিল এক টুকরো লোহা | সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার পরে তা গিলে নেয় একটি মাছ | সেই মাছ আবার ধরা পড়ে জিরু নামে এক ব্যাধের জালে | মাছের পেট থেকে লোহার খণ্ড পেয়ে তা দিয়ে তিরের ফলা বানায় জিরু | সেই তির নিয়ে সে বনের মধ্যে যায় পশু শিকারে | হঠাৎ তার চোখে পড়ে এক অদ্ভূত পাখি |যার গায়ে আবার কমল-চিহ্ন | লাল টুকটুকে পাখিটিকে তিরবিদ্ধ করে জিরু | কাছে গিয়ে বুঝতে পারে কী হয়ে গেছে | আসলে কোনও পাখি নয় | সেটা ছিল শ্রীকৃষ্ণের পা | ঘাসপাতার আড়ালে তাকেই পাখি বলে ভুল করে জিরু | আরও পড়ুন: সৃষ্টিসুখের উল্লাসেই সেনানীদের স্ত্রীরা আগ্রহী ‘ভাড়াটে জন্মদাত্রী’ হতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে বারবার ক্ষমা চায় জিরু | কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে বোঝান, এটা কোনও অপরাধ নয় | আসলে এটাই ছিল ভবিতব্য | এই বলে বনের মধ্যে বিষ্ণুর মন্দিরে গিয়ে বিষ্ণু-মূর্তিতে বিলীন হয়ে যান তিনি | এই জিরুরও আলাদা পরিচয় আছে | বলা হয়, পূর্বজন্মে সে ছিল বালি | যাকে কৃষ্ণ নিজের রাম-অবতারে অন্যায়ভাবে ঝোপের আড়াল থেকে লুকিয়ে হত্যা করেছিলেন | কর্ম ফলে পরজন্মে সেই জিরুর হাতেই মৃত্যু হল কৃষ্ণের | সেইসঙ্গে সত্যি হল গান্ধারীর অভিশাপ | যদুবংশ ধ্বংস হল | নিঃসঙ্গ মৃত্যু এসে গ্রাস করল শ্রীকৃষ্ণকে | বলা হয় গান্ধারীর অভিশাপেই সমুদ্র এসে গ্রাস করে দ্বারকা নগরীকে | আজও আরব সাগরের গভীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খ্রিস্টপূর্বে বিকশিত হওয়া প্রাচীন এই নগরীর ধ্বংসাবশেষ |


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্ষমা প্রার্থণা মন্ত্র

যদি ব্রজের লতা হইতাম, বৃক্ষ মূলে পড়ে থাকতাম। ভক্ত, বৈষ্ণব হেঁটে যেতে, তাদের চরণ ধূলা লইতাম।। লতা হয়ে শ্রীকৃষ্ণ পেল। আমার মানব জনম বৃথা গেল।। তাই শ্রীগুরুদেব। প্রভুপাদ শ্রীল চৈতন্য সুন্দর গোস্বামীজী বলেছেন? পেয়ে জনম হারাইলে আরকি জনম হবে। এমন সেই জনম পেয়ে ভজলাম না মাধবে।। জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ।। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।